ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

মাতামুহুরী মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতির প্রকল্পের অর্থ লোপাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৩৩একর বিশিষ্ট চিংড়ি-মৎস্য প্রকল্প দখলে রেখে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আত্মসাত, আত্বীয়করণ, অবৈধ সদস্য অর্ন্তভূক্তি ও মৎস্যঘের জবর দখল নিয়ে হামলা, লুটপাটের অভিযোগে উঠেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সমিতির সদস্যরা। শুক্রবার ৮এপ্রিল বিকালে প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সমিতির বর্তমান অনুমোদিত কমিটির সভাপতি নুরুল আলম ও সম্পাদক ওসমান গনি।

লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি সম্পাদক বলেন, ১৯৮৫ সালের ৩সেপ্টেম্বর মাতামুহুরী মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড (রেজি: নং ১১০৬/৮৫) প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সেসময় উপজেলার চরণদ্বীপ মৌজার ৭/১৯ দাগের সমিতির নামে সরকার ৩৩একর বিশিষ্ট চিংড়ি-মৎস্যপ্রকল্প বন্দোবস্তি পান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তৎকালীন পরিচালক সমিতির ১৪নং সদস্য নুরুল আবছার সমিতির যাবতীয় কাগজপত্র নিজের হেফাজতে রেখে ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিষ্ক্রিয় করে মনগড়া ও জোরজবরদস্তি করে সমিতি পরিচালনা এবং অর্থ আত্মসাতসহ আত্বীয়করণ করে অবৈধভাবে সদস্য অর্ন্তভূক্তি করেন।

সভাপতি সম্পাদদ বলেন, ২০২১সালে নুরুল আবছার মৃত্যু বরণ করলে চকরিয়া উপজেলা সমবায় অফিসারের কার্যালয় থেকে গত ২নভেম্বর’২১ইং আদেশ নং ৪৭.৬১.২২১৬.০০০.১৮.০২৩-১৩/২৫৬ মূলে সমিতি পরিচালনার জন্য একটি এডহক কমিটি অনুমোদন দেন। পরে এডহক কমিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে গত ৩মার্চ’২২ইং তারিখের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন।

কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হন নুরুল আলম ও সম্পাদক নির্বাচিত ওসমান গনি। বিগত সময়ে সমিতির এডহক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির অগোচরে কতিপয় সংখ্যক সমিতি বর্হিভূত অতিরিক্ত সদস্য অর্ন্তভূক্ত করায় সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯জন। পরবর্তীতে পাঁচজন সদস্য যথাক্রমে নুরুল আজিম, এম এন মনজুর মুর্শেদ, এম এন নিয়াজ মুর্শেদ, বুলবুল জন্নাত ও কানিছ ফাতেমা বিগত সময়ে সমিতির দায়িত্বে থাকাবস্থায় অর্থআত্মসাত, জাল জালিয়তি, অনিয়ম দূর্নীতি এবং আত্বীয় করণের কারণে ২০২২ সালের গত ৯মার্চ সমিতির রেজুলেশনের মাধ্যমে তাদের (পাঁচজন) সদস্যপদ বাতিল করা হয়। এরপরও বাতিলকৃত সদস্যরা সমিতি কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে হুমকি ও সমিতির শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় এবং আত্মসাতকৃত টাকা সমিতির বরাবরে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এডভোকেট মো: তৌফিক উদ্দিনের মাধ্যমে গত ২৪মার্চ আইনী নোটিশ দেয়া হয়েছে।

সভাপতি নুরুল আলম ও সম্পাদক ওসমান গনি অভিযোগ করে বলেন, সদস্য পদ বাতিল করা ওই পাঁচজন আইনী নোটিশ পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সর্বশেষ গত ৩এপ্রিল রাত দশটার দিকে মাতামুহুরী মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতির নামীয় চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার ৭/১৯ দাগের ৩৩একর বিশিষ্ট মৎস্য প্রকল্পে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় অবৈধ দখলদাররা। এসময় মৎস্য ঘের পরিচালক বেলাল উদ্দিন মেম্বার (৪৮), কর্মচারী বদিউল আলম (৪০), মোজাম্মেল হক (৪৭)কে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘের থেকে লুট করে নিয়ে যায় ৩টি বিহিঙ্গি জাল, ৬টি জাঁকিজাল ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামাদী এবং লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৫মন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও রক্ষিত খাবার সামগ্রী।

এঘটনায় সমিতির বর্তমান সভাপতি নুরুল আলম বাদী হয়ে গত ৪এপ্রিল’২২ইং চকরিয়া থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ছগিরশাহকাটা গ্রামের রহমত উল্লাহর পুত্র ঈমাম উদ্দিন, ডুমখালীর মো: শফির পুত্র গিয়াস উদ্দিন, সোয়াজানিয়ার মো: বাচ্চু, পৌরসভার পালাকাটা খোন্দকারপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল আবছারের পুত্র মো: নুরুল মোক্তাদির, নুরুল আশফাক, নুরুল আজিম, এম এন মনজুর মোর্শেদ, নুরুল মোস্তফা, এম এন নিয়াজ মুর্শেদসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫জনকে। কিন্তুু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিযুক্তরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি নুরুল আলম, সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম পটু, সম্পাদক ওসমান গনি, পরিচালক রফিউল আলম, সদস্য শাহ আলম, ফোরকানুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব, আয়েশা খাতুন, মৃত কামাল উদ্দিনের পক্ষে নুরুল হুদা মানিক, আবদু শুক্কুর, হেলাল উদ্দিন, নুরুল হুদা, আনোয়ার কামাল, মাজেদা বেগম, রাশেদা বেগম, এনামুল হকসহ মোট ১৬জন সদস্য। তারা প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার কামনা করেন।

 

পাঠকের মতামত: